SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দু ধর্ম শিক্ষা - সম্প্রীতি | NCTB BOOK

আমাদের শ্রেণিতে সকল ধর্ম-বর্ণের বন্ধুরা আছে। আমরা সবাই মিলেমিশে একসাথে থাকি, পড়াশুনা করি, আনন্দ করি। একে অন্যের সুখ-দুঃখ উপলব্ধি করি। এই যে, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একসাথে মিলেমিশে থাকা, একে অপরের সুখ-দুঃখ অনুভব করা, এটাই হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ বা সম্প্রীতি। সমাজজীবনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে হলে সমাজের সব সম্প্রদায় ও ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়।

বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার অন্যতম লীলাভূমি। যুগ যুগ ধরে এ দেশের ইতিহাসে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা লেখা আছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও বাংলার হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ। প্রাচীন, মধ্য, আধুনিক কোনো যুগেই এই সহাবস্থানের বন্ধন ছিঁড়ে যায়নি। সকল ধর্মের মূল মন্ত্র হচ্ছে শান্তি। কোনো ধর্মই অন্যায়কে সমর্থন করে না। সনাতন ধর্মের পাশাপাশি সব ধর্মীয় বিধিবিধান ও আচার-অনুষ্ঠান মানবকল্যাণে এবং মানুষকে সত্য-সুন্দর ও সুখশান্তির দিক-নির্দেশনা প্রদান করে। তাই বিশ্বব্যাপী আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একান্ত প্রয়োজন।

সনাতন ধর্মে শান্তি-সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় রয়েছে শাশ্বত আদর্শ ও সুমহান ঐতিহ্য। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত রয়েছে সনাতন ধর্মে। এখানে বলা আছে- সকল জীবেই ঈশ্বর বিরাজমান। ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করেন। এ প্রসঙ্গে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “যে যেভাবে সৃষ্টিকর্তাকে অর্থাৎ আমাকে ভজনা করে আমি সেভাবেই তাকে অনুগ্রহ করে থাকি।” বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে –

সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়া,
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিদ্ দুঃখ ভবেৎ।।
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি। (১/৪/১৪)

অর্থাৎ জগতের সবাই যেন সুখী হয়, সকলে আরোগ্য লাভ করুক, সবাই অপরের মঙ্গলার্থে কাজ করুক, কখনও যেন কেউ দুঃখ ভোগ না করেন। সর্বত্র শান্তি বিরাজ করুক।

এ জগতের সকল প্রাণীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। সনাতন বা হিন্দুধর্ম বিশেষ কোনো প্রাণী বা ধর্মের লোকের জন্য প্রার্থনা করে না।বিশ্বের সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের কল্যাণই হিন্দুধর্মের একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য।

শ্রী চৈতন্যদেব বলেছেন, “জীবে প্রেমের মাধ্যমেই আসল অভীষ্টপূর্ণ হয়। সকলের প্রতি ভালোবাসা প্রদান না করলে কখনো আমরা ঈপ্সিত লক্ষে পৌছাতে পারব না। মানুষে মানুষে তুচ্ছ ভেদাভেদ দূর করতে হবে। এই জগতে মানুষ ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব সে কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।”

স্বামী পরমানন্দ বলেছেন-

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য

 মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ। 

সনাতন ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামন্ত্র।।

ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি

অর্থাৎ এ জগতের সকল প্রাণীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। সনাতন বা হিন্দু ধর্ম কোনো বিশেষ প্রাণী বা ধর্মের লোকের জন্য প্রার্থনা করে না। বিশ্বে সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের কল্যাণই হিন্দু ধর্মের একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য।

চণ্ডীদাস বলেছেন, “সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই।”

অথর্ববেদের ঊনবিংশ কাণ্ডে বলা হয়েছে,
“দেবমাতা অদিতি কর্মের সাথে আমাদের শান্তি প্রদান করুক। অন্তরীক্ষ আমাদের হিত সাধন করুক। বায়ু আমাদের শান্তি দিক। বৃষ্টিপ্রদ গজর্নাদেব আমাদের কল্যাণ করুক। বাগদেবী সরস্বতী স্থিতির সাথে আমাদের শান্তি প্রদান করুক।”

অথর্ববেদে দেবমাতা অদিতি, বায়ু, সরস্বতী দেবী সকলের কাছে জগতের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা হয়। অর্থাৎ সনাতন ধর্মে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, বিশ্বের সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়।

এবার আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং মাদার তেরেসা সম্পর্কে জানব।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

জন্ম: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সনের ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যেপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল ভগবতী দেবী। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং সমাজ সংস্কারক।

সেবামূলক কাজ : তিনি অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের সেবা ও কল্যাণমূলক কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলায় নারীশিক্ষা প্রসারে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। তাঁকে বলা হয় নারীশিক্ষা প্রসারের পথিকৃৎ। তাঁর উদ্যোগে ভারতে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। তিনি শুধু নারী শিক্ষার উদ্যোগ নেননি, সকল শ্রেণির মানুষের শিক্ষার জন্যও তিনি নিবেদিত ছিলেন, সকলের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৮৫৩ সালে বীরসিংহ গ্রামে সবার জন্য একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায়ও সকল মানুষের শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য তিনি কাজ করেন। এসব স্কুলে পড়ানোর জন্য তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণার্থে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি ভারতেবর্ষে বিধবা-বিবাহ ও নারী শিক্ষার প্রচলন করেন। তিনিই প্রথম বাল্য-বিবাহ প্রথা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িতের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলা গদ্যের জনক। তিনি বাংলা লিপি সংস্কার করেন এবং যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়সহ একাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। নারীমুক্তি আন্দোলনের তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সোমপ্রকাশ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি তার এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজের ধনী-দরিদ্র, শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গিয়েছেন।

পুরস্কার ও অভিধা : জনহিতকর কর্মের জন্য তিনি ‘দয়ার সাগর’ এবং পাণ্ডিত্যের জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন।

মৃত্যু : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion